<p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরে ফরাসি এয়ারক্রাফট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি এ৩৫০ এয়ারক্রাফট কেনা, নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন চুক্তির ব্যাপারে বড় অগ্রগতি হতে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই গতকাল বুধবার ঢাকায় তার বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ফ্রান্স সফর কবে—জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তারিখ এখনো খোঁজ করা হচ্ছে। কারণ ওই পর্যায়ে অনেক এজেন্ডা থাকে। এটি এমন বিষয় নয় যে পাঁচ মিনিটে হয়ে যাবে।’</p> <p>ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের আগে মন্ত্রী পর্যায়ের সফর হবে। সম্ভবত আগামী শরতের আগেই ফ্রান্স থেকে ব্যবসায়ীদের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। এটিও বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। </p> <p>সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, এয়ারবাস দুটি পর্যায়ে আলোচনা করছে। একটি জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে, অন্যটি স্যাটেলাইট বিষয়ে। </p> <p>রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুটি আলোচনাই বেশ ভালো চলছে। আর আমরা আশাবাদী যে শিগগিরই এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত ও স্বাক্ষরিত হবে।’</p> <p>ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিরক্ষা খাতের বিষয়ে তিনি তেমন কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে আলোচনা চলছে।</p> <p>আরো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের কাছে এয়ারক্রাফট ও স্যাটেলাইট বিক্রি করতে আগ্রহী-এমন তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকরা জানতে চান, বাংলাদেশ কেন ফ্রান্সের কাছ থেকে সেগুলো কিনবে?</p> <p>জবাবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আশাবাদী ও নিশ্চিত। কারণ আমাদের ফ্রান্সের প্রস্তাবই সেরা।’</p> <p><strong>অর্থনৈতিক সুযোগ</strong><br /> অর্থনৈতিক খাত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, এলডিসি উত্তরণ ও উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বড় বিষয়। বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখার প্রয়াস চালাচ্ছে। শ্রম ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p><strong>রোহিঙ্গা পরিস্থিতি</strong><br /> রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারের ক্যাম্পের মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি এবং সীমান্তের ওপারের আশপাশের পরিস্থিতি ও যে ঝুঁকি বাড়ছে তাতে তাঁরা বেশ চিন্তিত।</p> <p>ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির এলাকা ও এর বাইরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি ফ্রান্স কৃতজ্ঞ। </p> <p>রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে না। প্রত্যাবাসনের আগে মিয়ানমার পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে।</p> <p><strong>ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করেনি ফ্রান্স</strong><br /> কয়েকজন বাংলাদেশির ফ্রান্সের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান বা ভিসা বাতিল করা হয়েছে—গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি কখনো এ ধরনের ‘ডিসইনফরমেশন’ (অপতথ্য বা গুজব) প্রচেষ্টার মতো বিষয়ে মনোযোগ দিই না। তবে আমি যাইহোক, আমি সেই ব্যক্তির বার্তার জবাব দিয়েছিলাম। কারণ এটি পুরোপুরি অসত্য।’</p> <p>ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি যদি সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারি, আমরা কোনো ভিসা প্রত্যাখ্যান করিনি। কারণ আমরা কোনো আবেদনই পাইনি। কেউ যখন আবেদনই করেনি, তখন কিভাবে প্রত্যাখ্যানের প্রশ্ন আসে?’</p> <p><strong>বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার</strong><br /> ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত তার দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বৈরিতা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ফ্রান্স।</p> <p>রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভূমিকার সমালোচনা করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত। একই সঙ্গে তিনি হামাসের কিছু নেতা ও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানে’ বিশ্বাস করে।</p>